হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)

Hazrat Abdullah Ibn Abbas biography at sultanee blog by Md Jahangir Adil

Hazrat Abdullah Ibn Abbas (Ra:) | عَبْد ٱللَّٰه ٱبْن عَبَّاس

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) একজন জনপ্রিয় সাহাবি, তিনি রাসূল (স:) এর হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে অন্যতম। সর্বাধিক হাদিস বর্ননা কারী সাহাবিদের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) একজন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ১৬৬০। ঈমাম বুখারী ও ঈমাম মুসলিম (র:) একত্রে ৯৫ টি, এককভাবে ঈমাম বুখারী (র:) ১২০ টি এবং ঈমাম মুসলিম (র:) ৪৯ টি হাদিস বর্ননা করেছেন। কারো মতে তার বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ২৬৬০ টি।

বহু সংখক সাহাবী ও তাবেয়ী তার বরাতে হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিস বর্ণনার পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের জন্য তার আরো অনেক অবদান রয়েছে। যাদের জন্য রাসূল (সা:) সয়ং দোয়া করেছেন তাদের মধ্যে হযরত আব্বাস একজন। রাসূল (সা:) তার জন্যে হিকমত, দ্বীনি জ্ঞান ও তাফসীর বিষয়ে প্রজ্ঞার জন্যে বিশেষভাবে দোয়া করেন, “হে আল্লাহ তা’য়ালা! আপনি তাকে (ইবনে আব্বাস) দ্বীনি প্রজ্ঞা ও তাফসীর শাস্ত্রের অগাধ জ্ঞান দান করুন।”

পরিচিতি:
নাম আব্দুল্লাহ; উপনাম আবুল আব্বাস; উপাধি হিবরুল উম্মাহ
পিতার নাম আব্বাস; মাতার নাম উম্মাল ফদল লুবাব বিনতে হারিস; তার মা ছিলেন রাসূল (স:) এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনার ভগ্নি।

তিনি হিজরতের ৩ বছর পূর্বে হযরত আবু তালিবের স্বপরিবারে সমাজচ্যুত হয়ে গিরিসংকটে আটক থাকা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। রাসূল (স:) এর ইন্তিকালের সময় তার বয়স হয়েছিল ১৩ বা ১৫ বছর কারো মতে ১০ বছর। তার মাতা লুবাবা বিনতে হারিস হিজরতের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন বিধায় হযরত আব্দুল্লাহকে আশৈশব মুসলিম হিসেবে গন্য করা হয়।

তিনি সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে ইলমে ফিক্হে ও ইলমে তাফসীরে ‘রঈসুল মুফাস্সিরীন’ বা মুফাস্সির স¤্রাট উপাধিতে ভূষিত হন। তার জ্ঞানের গভীরতার কারণ তাকে হিবরুল উম্মাহ উপাধি দেয়া হয়। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত মাসরূক (র) বলেন ‘আমি যখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে দেখতাম তখন মনে মনে বলতাম ইনি সর্বাপেক্ষা সুন্দর ব্যাক্তি। আর যখন তিনি কথা বার্তা বলতেন, তখন আমি ধারনা করতাম বাক্যালংকারে তিনি উচ্চাঙ্গেও ব্যাক্তি। আর যখন তিনি হাদিস বর্ণনা করতেন, তখন আমি ভাবতাম তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম ও জ্ঞানী’।
মু’য়াম্মার বলেন তিনি তিনজন মহান ব্যাক্তি থেকে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তারা হলেন হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:) ও উবাই ইবনে কা’ব (রা:)।
হযরত ওমর (রা:) তার সম্পর্কে বলতেন তিনি ‘তরুণ প্রবীণ’ অর্থ্যাৎ বয়সে তরুণ আর জ্ঞানে প্রবীণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস একাধারে ফিকহ্্, হাদিস, তাফসীর, গণিত, ফারায়েয, আরবী সাহিত্য, ইতিহাস সহ একাধিক শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। এককথায় মুসলিম উম্মার মধ্যে অদ্বিতীয় জ্ঞানী।

হযরত আলী (রা:) এর শাসনামলে তিনি বসরার গর্ভনর এর দ্বায়িত্ব পালন করেন। ৩৭ ও ৩৮ হিজরিতে সংঘটিত জামাল ও সিফ্্ফীনের যুদ্ধে হযরত আলী (রা:) এর পক্ষে একটি অংশের সেনাপতি ছিলেন এবং সিফ্ফীনের যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির স্বাক্ষরকারী।
তিনি দেখতে গৌরবর্ণের, সামান্য মোটা ও দীর্ঘকায় ছিলেন। তার চেহারা ছিল সুন্দও ও লাবণ্যময়, মাথায় যথেষ্ট চুল ছিল। তিনি সবসময় চুলে মেহেদি ব্যবহার করতেন। বৃদ্ধকালে তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা:) শাসনামলে হযরত জিবরাইল (আ:) কে স্বরূপে দুবার দেখা এই সাহাবী (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস) তায়েফ নগরীতে ৬৮/৬৯/৭০ হিজরিতে ৭১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। তার জানাযার নামাজে ইমামতি করেন মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া (রা:)। দাফনকার্য সমাপনান্তে ইবনুল হানাফিয়া মন্তব্য করেন, ‘আল্লাহর শপথ! আজ এ জাতির জ্ঞান সমুদ্র ধরা ত্যাগ করলো’।

Hazrat Abdullah Ibn Abbas (Ra:) সম্পর্কে আরো জানতে ভিজিট করুন উইকিপিডিয়া